এই আচরণের জন্য আমরা লজ্জিত: অ্যাঞ্জেলিনা জোলি

অনলাইন ডেস্ক: বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেখতে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে এসেছেন হলিউড অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। জোলি জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর বিশেষ দূত হিসেবে কাজ করছেন। সোমবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে জোলি কক্সবাজার পৌঁছান।

আজ (৫ ফেব্রুয়ারি) রোহিঙ্গা শিবিরে অনেকটা সময় কাটিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জোলি। সেখানে তিনি বলেন-

‘সারা বিশ্বের জন্যই আজ রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানো একটা মানবিক দায়িত্ব। যদিও সন্দেহাতীতভাবে বহু সংখ্যক রোহিঙ্গার জীবন বাঁচানো গেছে, দেওয়া হয়েছে সম্মানের সাথে বাঁচার সুযোগ। তবে এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। একটা পুরো প্রজন্মের রোহিঙ্গা শিশু এখনও শিক্ষা বঞ্চিত রয়ে গেছে যা পাওয়া তাদের অধিকার। মায়ানমারে থাকার সময়ে দীর্ঘসময়ের জন্য তাদের এই মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছিল।

আজ আমি এখানে এসেছি রোহিঙ্গা শিশুদের কীভাবে শিক্ষার আওতায় আনা যায় তা দেখা ও তারা যেন নিজেদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষা করা এবং পরিস্থিতি ঠিক হলে মায়ানমারে ফিরে গিয়ে নিজেদের সম্প্রদায়ের জীবন নতুন করে সাজাতে পারে সেই যোগ্যতা অর্জন করতে পারে তা নিশ্চিত করতে।

গতকাল আমি গণধর্ষণ, যৌন নির্যাতন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন এমন অনেকের সাথে দেখা করেছি। জরুরি অবস্থা চালু হওয়ার পর প্রায় দুইবছর হয়ে গেলেও যেসব রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে বেঁচে গিয়েছেন তাদের যে পরিমাণ মনোঃসামাজিক সমর্থন দেওয়া দরকার তার চাহিদার সাথে বাস্তবতার অনেক ফারাক রয়েছে। এই ফারাকটা সবার নজরে আনা দরকার।

বাংলাদেশ একটা উদার দেশ। এদেশের আছে সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সংস্কৃতি। কিন্তু আছে সম্পদের সীমাবদ্ধতা। এদেশের জন্য একা একা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাহায্য করা সম্ভব না। তাই আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আবেদন করব তারা যেন এই দেশে অবস্থান করা শরণার্থীদের যেভাবে সুন্দরভাবে দেখাশোনা করা হচ্ছে তা চালু রাখতে সহযোগিতা অব্যাহত রাখেন।

সবশেষে ও সবার চাইতে গুরুত্বপূর্ণ যে কথা বলতে চাই তা রোহিঙ্গা রিফিউজিদের উদ্দেশ্যে। আমি বলতে চাই, আপনাদের মাঝে আসতে পেরে আজ আমি কৃতজ্ঞ এবং সম্মানিত বোধ করছি। নিরাপদে বাস করার পূর্ণ অধিকার আপনাদের আছে। অধিকার আছে স্বাধীনভাবে বাঁচার, নিজেদের ধর্ম পালনের এবং অন্যান্য ধর্মবিশ্বাসের ও বর্ণের লোকের সাথে একসাথে বাস করার অধিকারও আছে আপনাদের।

বাস্তুচিত না হওয়ার সম্পূর্ণ অধিকার আছে আপনাদের। যে আচরণ আপনাদের সাথে করা হয়েছে তাতে আমরা সবাই লজ্জিত।

আজ যদি বলি, এই ঘটনা যে ঘটবে, তা আমরা আগে থেকে জানতাম না, তাহলে ভুল বলা হবে। চারদশকের বেশি সময় ধরে তাদের (রোহিঙ্গাদের) প্রতি যে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে তা নিয়ে কেউ মাথা ঘামায়নি। বরং এই ঘটনা (রোহিঙ্গাদের অত্যাচার ও বাস্তুচিত করা) আমাদের মনে করায় যে কেন আজকের পৃথিবীতে ৬৮ মিলিয়ন লোক বাস্তুচিত। কারণ, আমরা সংঘর্ষ এড়াতে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে পারিনি। বরং সংঘর্ষের ফলে যেসব অপূরণীয় মানবিক বিপর্যয় ঘটে তা ঠিক করতেই বেশি ব্যস্ত থেকেছি।

তাই বলা যায় রোহিঙ্গা সংকট আসলে অন্য কোনো বড় সংকটের প্রতীক। সেই সাথে আমাদের এটাও বলতে হবে যে সারা পৃথিবীতেই, সব সমাজেই মানুষ যখন নিজের চাইতেও বড় কোনো কারণে একত্রিত হয়, তখন কি ঘটে সেটারও এটা (রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয়প্রদান) একটা দারুণ উদাহরণ।

আমি প্রার্থনা করি, যে অসাধরণ উদারতার ও মহত্বের উদাহরণ এখানে সৃষ্টি হয়েছে তার প্রতি সবধরণের সমর্থন বজায় থাকুক। ধন্যবাদ সবাইকে। ধন্যবাদ বাংলাদেশ সরকারকে।’

কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের সাথে সাক্ষাতের পর তার ঢাকায় এসে প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠকের কথা রয়েছে।